• রবিবার, ০৯ নভেম্বর ২০২৫, ১০:৪৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম
কানাইঘাট মমতাজগঞ্জ বাজারে চাঁদা না পেয়ে ব্যবসায়ী সাজ্জাদুর রহমানের উপর হামলার অভিযোগ জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আকাঙ্খা পূরণে দাঁড়িপাল্লার বিজয় নিশ্চিত করতে হবে ——মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম মনোনয়ন সংগ্রহ ৩৬ প্রার্থীর রেড ক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিট’র নির্বাচন সিলেট “ল” কলেেজর ছাত্র ও কনস্ট্রাকশন ব্যবসায়ী তুহিন নিখোঁজ কানাইঘাটে ব্যবসায়ীকে মারধর করে ১লক্ষ দশ হাজার টাকা ছিনতাইর অভিযোগ নবজাগরণ স্বেচ্ছা সেবা ফাউন্ডেশনের কমিটি গঠন সভাপতি সৈয়দ রাসেল, সাধারণ সম্পাদক মোঃ ইমাজ উদ্দিন তাহিরপুরে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে টাকা আদায়ের অভিযোগ কেন্দ্র সচিবের বিরুদ্ধে বিএনপি পরিচয়ে চাঁদাবাজি হামলা : ব্যবস্থা গ্রহন দাবি দৈনিক নয়া দিগন্তের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে জামায়াত নেতৃবৃন্দের যোগদান সাগর রুনি হত্যার প্রতিবেদনের সময় বাড়ল ছয় মাস

সিলেট-৫ আসনে ভোটের রাজনীতি ও কিছু কথা

Reporter Name / ৫৯ Time View
Update : রবিবার, ১৫ জুন, ২০২৫

সিলেট-৫ আসনে ভোটের রাজনীতি ও কিছু কথা
—————————————————————————
জাতি পরবর্তী জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য অপেক্ষমাণ। দীর্ঘ ১৬ বছরের ফ্যাসিবাদী শাসন ও শোষনের অবসানের পর এ নির্বাচন দেশ ও সকলের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

সিলেট-৫ বাংলাদেশের ৩০০টি নির্বাচনী আসনের একটি। আলেম-উলামা অধ্যুষিত এলাকা হওয়ায় সিলেটের মধ্যে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ আসন। ২০২৩ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এ আসনের মোট ভোটার সংখ্যা ৪,০২,৩২৫ জন। আসনটি গঠিত হয় ১৯৭৩ সালে। সিলেট জেলার কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলা নিয়ে আসনটি গঠিত।

বিভিন্ন জাতীয় নির্বাচনে এ আসনে ভোটের হিসাব:
—————————————————————————–
স্বাধীন বাংলাদেশে ১৯৭৩ সালে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এরপর ক্রমান্বয়ে ১৯৭৯, ১৯৮৬, ১৯৮৮, ১৯৯১, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬, ১২ জুন ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও সর্বশেষ ২০২৪ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯৮৮, ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬, ২০১৪ ও ২০২৪ সালের নির্বাচন বিরোধী দল ও ভোটারবিহীন হওয়ায় আমরা ঐ নির্বাচন গুলোর ফলাফলকে আলোচনার বাইরে রাখছি।

১৯৭৩ সালের নির্বাচনে চতুলের হাবিবুর রহমান তোতা মিয়া আওয়ামী লীগ থেকে নির্বাচিত হন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আল্লামা মুশাহিদ বায়মপুরীর ছেলে শেখজাদা ফারুক আহমদ।

১৯৭৯ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন সাবেক পুলিশ কর্মকর্তা স্বতন্ত্র প্রার্থী এম এ হক, যিনি পরবর্তীতে এরশাদ সরকারের মন্ত্রী নিযুক্ত হয়েছিলেন।তিনি ছিলেন জকিগঞ্জের অধিবাসী। সে সময়ে সারা দেশে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের বিএনপি প্রার্থীরা একচেটিয়া নির্বাচিত হলেও এ আসনে বিএনপি প্রার্থী হারিছ চৌধুরী জামানত বাঁচাতে পারেন নি। এম এ হকের নিকটবর্তী প্রার্থী ছিলেন মুসলিম লীগের মিনিস্টার আব্দুস সালাম। তিনি কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের সোনাপুর গ্ৰামের বাসিন্দা ছিলেন।

১৯৮৬ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন জাতীয় পার্টির ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদুর রহমান মজুমদার। তিনি জকিগঞ্জের অধিবাসী ছিলেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন
জনদলের এম এ হক। জামায়াতের মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী প্রথমবারের মতো এ নির্বাচনে অংশ নিয়ে উল্লেখযোগ্য ভোট পেয়েছিলেন।

১৯৯১ সালের নির্বাচনে এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন ইসলামী ঐক্যজোট প্রার্থী ও খেলাফত মজলিস নেতা জকিগঞ্জের মাওলানা ওবায়দুল হক। জামায়াত ছাড়া প্রায় সকল ইসলামী দল মিলে ইসলামী ঐক্যজোট গঠন করেছিল। তিনি পেয়েছিলেন ২৬২৬৭ ভোট। ভোটের শতকরা হার ছিল ২৯। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার। তিনি পেয়েছিলেন ১৯৬৮২ ভোট। ভোটের শতকরা হার ছিল ২১.৭। তৃতীয় স্থান লাভ করেছিলেন জামায়াতের মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ১৫২০৭। ভোটের শতকরা হার ছিল ১৬.৮।
বিএনপির হারিছ চৌধুরী চতুর্থ স্থান লাভ করেছিলেন। তিনি পেয়েছিলেন ১৪৫৯৭ ভোট। ভোটের শতকরা হার ছিল ১৬.১। পঞ্চম স্থান লাভ করেছিলেন জাতীয় পার্টির এম এ মতিন চৌধুরী। তিনি ১৩ হাজারের একটু বেশি ভোট পেয়েছিলেন।

১৯৯৬ সালের জাতীয় নির্বাচনে কুটকৌশল করে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার। তার ভাগে দেখানো হয় ২৯৪৮৩ ভোট, যার শতকরা হার ছিল ২৫.২। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জামায়াতের মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। তিনি পেয়েছিলেন ২৮১২০ ভোট, যার শতকরা হার ছিল ২৪.১। এতে প্রথমে বিজয়ী হিসেবে মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীর নাম ঘোষণা করা হয়েছিল। পরে ঘোষণা পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদারকে বিজয়ী দেখানো হয়। এ নির্বাচনে জাতীয় পার্টির এম এ রকিব ১৫০৫৪ ভোট পেয়ে তৃতীয়, সম্মিলিত সংগ্রাম পরিষদ ও আল ইসলাহের মাওলানা হাবিবুর রহমান ১৪৩৫৬ ভোট পেয়ে চতুর্থ, জমিয়তের মাওলানা আলিম উদ্দিন ১৩৩২৫ ভোট পেয়ে পঞ্চম, ইসলামী ঐক্যজোট ও খেলাফত মজলিসের মাওলানা ওবায়দুল হক ১০৪২৫ ভোট পেয়ে ৬ষ্ট এবং বিএনপির এম এ মতিন চৌধুরী ৪৮৬০ ভোট পেয়ে সপ্তম স্থান অধিকার করেছিলেন।

২০০১ সালের নির্বাচনে চারদলীয় জোট থেকে জামায়াতের মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী ৭৭৭৫০ ভোট পেয়ে বিজয়ী অর্জন করেন, যার শতকরা হার ছিল ৪৯.১। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার। তিনি পেয়েছিলেন ৫২৮৮৫ ভোট, যার শতকরা হার ছিল ৩৩.৪। তৃতীয় স্থান লাভ করেছিলেন ইসলামী জাতীয় ফ্রন্ট ও জাতীয় পার্টির এম আর হক। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ২৩৫৩৮ । চতুর্থ স্থান লাভ করেছিলেন জাতীয় পার্টির( মঞ্জু) প্রার্থী নাজমা আক্তার চৌধুরী। তিনি পেয়েছিলেন ৩৩৮৯ ভোট।

২০০৮ সালের জাতীয় নির্বাচনে নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার। তিনি পেয়েছিলেন ১,০৯,৬৯০ ভোট, যার শতকরা হার ছিল ৫৪.৭। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন চার দল ও জামায়াতের মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী। তার প্রাপ্ত ভোট ছিল ৭৮,০৬১, যার শতকরা হার ছিল ৩৮.৯। জমিয়তের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক পেয়েছিলেন ৮৯৪৬ ভোট , এছাড়া ব্যারিষ্টার মাওলানা কুতুব উদ্দিন শিকদার পেয়েছিলেন ২৫৯৯ ভোট।

২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরীকে বঞ্চিত করে জমিয়তের মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুককে ২৩ দলীয় জোট থেকে মনোনয়ন দেয়া হয়। এতে আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার। তিনি পেয়েছিলেন ১,৩৯,৭৩৫। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ২৩ দলীয় জোট ও জমিয়তের প্রার্থী মাওলানা ওবায়দুল্লাহ ফারুক। তিনি পেয়েছিলেন ৮৬,১৫১ ভোট।

সার্বিক পর্যালোচনায় দেখা যায় এ আসন মূলত: ইসলামপন্থীদের। আর ইসলামপন্থীদের মধ্যে এককভাবে জামায়াতের ভোটই বেশী। ইসলামপন্থীদের ভোট বিভাজনের সুযোগে সেক্যুলার শক্তি নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ পায়। এবার ইসলামপন্থীদের মধ্যে জোট বা আসন সমঝোতার প্রক্রিয়া চলছে। অতএব ইসলামপন্থীরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে বিজয়ের হাসি তারাই হাসবে ইনশাআল্লাহ। আর কোনো কারণে জোট বিহীন নির্বাচন হলে তাতেও জামায়াত প্রার্থী ভালো করবেন ইনশাআল্লাহ।

লেখক:মাওলানা ফয়জুল্লাহ বাহার
উপাধ্যক্ষ,
শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা পাঠানটুলা সিলেট।
১৫ জুন ২০২৫,


More News Of This Category
bdit.com.bd